"Hymen can't be a symbol of virginity.
.
♦সামাজিক সচেতনতামূলক লেখা♦
---------------------------------------------
আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের অধিকাংশ মানুষের মাঝে একটা মিথ প্রচলিত আছে যে ভার্জিন মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রথম বার সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স হলে অবশ্যই ব্লিডিং হবে।
হ্যাঁ প্রথমবার ব্লিডিং হতে পারে,
কিন্তু ব্লিডিং কখনোই ভার্জিনিটির প্রমান হতে পারে না।
এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত একটা ধারনা।
সব মহিলার ক্ষেত্রেই যে প্রথম বার শারীরিক সম্পর্কের কারনে ব্লিডিং হয়না তা আমি এ লেখায় বিস্তারিত লিখবো।
তার আগে জানা উচিত হাইমেন কি?
হাইমেন হলো একধরনের পাতলা পর্দা যা যোনী মুখের কিছু অংশ বা পুরোটা ঢেকে রাখে।
প্রত্যেক মহিলার একিরকম হাইমেন থাকে না।
মহিলা থেকে মহিলা ভেদে হাইমেনের পার্থক্য থাকে।
উচ্চতা আর ওজনে যেমন পার্থক্য দেখা যায় তেমনি হাইমেনে ও।
কোন মহিলার হাইমেন পাতলা কারো বা পুরো আবার কারো কারো ক্ষেত্রে প্রায় নেই বললেই চলে।
কারো যোনীমুখেএ অনেক্টুকু জায়গা ঢাকা থাকে কারো অল্প।
আবার অনেকের ক্ষেত্রে জন্মগত ভাবেই অনুপস্থিত।
ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের মতে মাত্র ৩৭% মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রথমবার শারীরীক সম্পর্কের সময় ব্লিডিং হতে পারে।
তারপরেও এ দেশের মানুষ মনে করে সেক্সেুয়াল ইন্টারকোর্সের পরে হাইমেন (সতীচ্ছেদ) পর্দাটা ফেঁটে যাবে রক্তপাত হবে এবং একেবারেই চিরদিনের জন্য বিলীন হবে।
লোকে মুখে শোনা এই অন্ধবিশ্বাস যদি সত্য হয়, তার মানে সেই নারী সতী না, বা ভার্জিন না।
যেটা আমাদের একেবারেই একটা ভুল ধারণা বা অজ্ঞতার পরিচয় বহন করে।
যুগ যুগ ধরে এই অন্ধবিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে নারীকে অবিশ্বাস করা হচ্ছে, অপমাণিত করা হচ্ছে।
আর বিয়ের পরে প্রথম সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সে রক্তপাত না হলে নারীকে বলা হচ্ছে অসতী,করা হচ্ছে অসম্মান, ভাবা হচ্ছে বিশ্বাসঘাতক।
ইন্দোনেশিয়ায় ভার্জিনিটি চেইক করে নারীদেরকে আর্মিতে নিয়োগ দেয়।
অসলোতে মেয়েদের ভার্জিনিটি চেইক করে পিতামাতাকে বোঝানো হচ্ছে তাদের মেয়ে সন্তানেরা শেষ হয়ে যায় নি।
তাছাড়া ২০১১ সালে একদল মিশরীয় নারী আন্দোলনকারীকে সেদেশের সেনাবাহিনী জোরপূর্বক ভার্জিনিটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করে।
বর্তমান বিশ্বের নারীরা এই বিষয়টি নিয়ে এতটা হেনস্থা হচ্ছেন যে তারা নিজেদেরকে ভার্জিন প্রমাণ করতে আর বিয়ের পর প্রথম সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সে যেন রক্তপাত হয় সেজন্য প্লাস্টিক সার্জারি ,(যেটাকে রিভার্জিনেশন বলা হয়) করে ব্লাড ভেইল ব্যবহার করছেন। কখনও বা ফেইক হাইমেন ব্যবহার করছেন যার সাথে ব্লাড থাকে, শুধুমাত্র রক্তপাতকে নিশ্চিত করার জন্য।
নারীদেহের বিস্তারিত নিয়ে লেখা,
"The Wonder Down Under "
বইয়ের দুইজন লেখক ও মেডিকেল স্টুডেন্টস TEDx এ এটা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণাকে তুলে ধরেছেন,
হাইমেন হচ্ছে একটা টিস্যুযুক্ত পর্দা যেটা ভ্যাজাইনার সম্মুখে কিনারাঘেষে থাকে, যেটা ভার্জিন মেমব্রেন বলেও পরিচিত।
এই পর্দার গঠন, অর্ধাচন্দ্রাকৃতির মত, বা লোববিশিষ্ট হতে পারে যার মাঝে একটা বড় ছিদ্র থাকে।
কখনও কখনও হাইমেনে অনেক ছিদ্র থাকতে পারে।
তাছাড়া আরো অনেক আকৃতি হতে পারে।
হাইমেনের এই গঠনগত পার্থক্যের কারণে নারীর ভার্জিনিটি চেইক করাটা খুব কঠিন।
ভার্জিন মেয়েদের প্রথম সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সে হাইমেন ভাঙবে, এটা সম্ভন নয়।
হাইমেন চুলের খোপা বাঁধার রাবারের বাঁধনের মত যার কেন্দ্রে ছিদ্র থাকে আর চারপাশে কাপড়ের আবরণ।
একবার ভাবুন, চুলের খোপা বাঁধার রাবারের জিনিসটাকে টেনে লম্বা করা যায়, তেমনি হাইমেনও প্রসারিত হতে পারে শুধু মাঝের ছিদ্রটাই তখন বড় হয়, ভেঙে যায় না,বা ছিড়ে যায় না।
হাইমেনটা এতটাই ইলাস্টিক যে,কোনপ্রকার ড্যামেজ ছাড়াই এটা প্রসারিত হতে পারে।
একটা পুরুষাঙ্গের জন্য হাইমেনের ছিদ্রটা যথেষ্ঠ প্রসারিত হতে পারে,সুতরাং সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স ভেঙে যাবার প্রশ্নই আসে না।
এখন বলুন ভ্যাজাইনাল সেক্সে কিভাবে রক্তপাত হবে হাইমেনের জন্য?
এটা তো ইলাস্টিক জাতীয়,শুধু প্রসারিত হয়। সো,
শারীরবিদ্যা অনুযায়ী হাইমেন বা স্বতীপর্দার কারণে রক্তপাত হওয়া অসম্ভব।
সেই ১৯০৬ সালে এই বিষয়টা প্রমাণ করে গেছেন নরওয়েজিয়ান ডাক্তার
Mary Jean Set.
যিনি একজন মধ্যবয়স্কা নারী যৌনকর্মীকে পরীক্ষা করে দেখেন,
তার জেনেটেলিয়া (যৌনাঙ্গের বিভিন্ন অংশ)
একজন টিনএইজ মেয়ের মত।
এখন বলুন একজন মধ্যবয়ষ্কা নারী যৌনকর্মীর হাইমেন ঠিক থাকলো কিভাবে?
ডাক্তাররা একবার ৩৬ জন টিনএইজ প্রেগন্যান্ট নারীকে পরীক্ষা করে দেখেন তাদের মধ্যে দুইজনের হাইমেন একেবারেই অক্ষত। বাকী ৩৪ জনের সামান্য বিকৃতি।
যেটা লোকে মুখে শোনা ঐ দুই নাম্বার কল্পকাহিনীকে মিথ্যে প্রমাণ করে। অর্থাৎ, সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সে হাইমেন একেবারেই নষ্ট হয়ে যায় না ।
হাইমেন ড্যামেজ অনেক কারণে হতে পারে,
যেমন মেয়েদের সাইকেল চালানো, খেলাধুলা বাবা অন্য কোন কারণে হাইমেনে আঘাত পেলে।
দুই পায়ের মাঝখানের অঙ্গ দ্বারা কোন মেয়ের সেক্সুয়াল স্টোরি জানা কোনদিনও সম্ভব না।
প্রত্যেক নারী,বাবা -মা, এবং আপকামিং হাজব্যান্ডকে এই হাইমেন সম্পর্কে এবং হাইমেন কিভাবে ইলাস্টিকের মত কাজ করে সেটা জানানোর জন্য সকলের কাছে অনুরোধ রইল।
হাইমেন নিয়ে এই অন্ধবিশ্বাসকে দূর করতে শিক্ষিত সমাজের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
যেন কোন নারী তার দেহের এই একটা অংশের জন্য, অকারণে অপমাণিত না হয়,অসম্মানিত না হয়।
"Hymen can't be a symbol of virginity. "
.