রওনক আর ক্যানসার


...রওনক পার্কে একা একা বসে আছে। অনেকদিন
হলো পার্কে একা একা বসতে চেয়েও বসা হয় না। আগে খুব করে আসতো সে এখানে। প্রেমিকার মুখের মিস্টি হাসি, কোলে শুয়ে বাদাম খাওয়া। সুন্দরী মেয়ে দেখলে বন্ধুদের কারো মুখ থেকে মৃদু শব্দে 'দ্যাখ মামা মাইয়াটা কি সন্দর' এই কথা বের হওয়া।

একি রওনক হাসছে। হ্যাঁ রওনকের সেই
কথাগুলো মনে পড়ে ঠোটের কোনায় হাসি পাচ্ছে। অনেক দিন হয়ে গেল রওনকের মুখ থেকে এমন হাসি পর্যন্ত কেউ দেখেনি। দেখবেই বা কিভাবে রওনক সেই যে কবে হাসি ঠাট্টা ভুলে গেছে তা আর কে জানে।

কিছুদিন হলো সে রিহ্যাব থেকে এসেছে। রিহ্যাব থেকে আসার পরে বাসায়ই বসে থাকে। আগের মত আজাইরা বিজি কাজে সে বাসা থেকে বের হয় না। এই আজ পার্কে এসেছে এটাই রিহ্যাব থেকে ফিরে প্রথম বাসা বাইরে বের হওয়া। মোবাইলটা এতদিন বন্ধ ছিলো। আজ সে মোবাইলটি সাথে করে পার্কে নিয়ে এসেছে। মোবাইলের সুইচ অন করার তীব্র ইচ্ছে হচ্ছে। ইচ্ছে করছে সিতীকে একটা কল দিতে। না!! সে মোবাইল অন করে আর সেই সাহস বুকে সঞ্চারিত করতে পারেনি। হ্যা এটাই
সেই মেয়ে যার কোলে শুয়ে রওনক প্রায় বাদাম খেত, চুলের সুবাস গায়ে জড়াতো।

এই কথা ভাবতে ভাবতেই রওনকের চেহারাটা মলিন হয়ে গেল। অনেক সুন্দর চেহারা ছিলো রওনকের নেশায় আসক্ত হয়ে সবটাই নেশা খেয়ে নিয়েছে। এমনকি সিতীর সেই চিরচেনা রওনকের মুখটাও। তাইতো এখন মনে হয় সিতী ওকে চিনতেই পারে না। তা না হলে এমন প্রেম কি কেউ
ভুলতে পারে!!

নাহ!! রিহ্যাব থেকে আসার পরে একটা সিগেরেট খাওয়া হয়নি। রওনক ভেবেছিলো আর সিগেরেট খাবে না কখনোই। কিন্তু সিতীর কথা মনে পড়তেই সিগেরেটটা কেমন যেন সিডাটিভের মত লাগছে এখন। এই সিতীর জন্যই তো রওনকের সিগারেটের
হাতে খড়ি। রওনক প্রেম নিবেদন করলো, সিতী সরাসরি না বলে দিলো। সেই দুঃখেই তো রওনক প্রথম সিগেরেটে টান দিলো। এখনো হাতে সিগেরেট
পুড়ছে রওনককে আনন্দ দেওয়ার নিমিত্তে।

সিতী অবশ্য এই সিগেরেট খাওয়াটা পছন্দ করতো।
তবে সিগেরেটের অন্তরালে এত নেশায় আসক্ত রওনক। সেই রওনককে সিতী দেখতে পায় রিহ্যাবে যাওয়ার কিছুদিন আগে। মনে মনে আজ কাদের ভাইয়ের সেই কথা দুটো খুনাক্ষরে টের পাচ্ছে রওনক। কাদের ভাই প্রায় দুইটা কথা বলতো।
"যে সিগারেট খেতে পারে সে সব কিছুই খেতে পারে। আর যে মিথ্যা কথা বলতে পারে সে সব পাপই করতে পারে।" কাদের ভাই হচ্ছে রওনকের এক ফ্রেন্ডের কাছের বড়ভাই। সেই সুত্রে রওনকের সাথেও ভালোই সখ্যতা ছিলো।

সিগারেটটা হাত থেকে ফেলেই ঘুরে তাকিয়ে দেখলো কিছু পিচ্চি পিচ্চি টোকাই ছেলেরা মানুষের খাওয়া সিগেরেট মাটি থেকে তুলে আবার ধরিয়ে টানছে। এই দৃশ্য দেখে রওনকের সেই নেংটা কালের একটা কথা মনে পড়ে গেল। তখন সে খুব দুষ্টু ছিলো, একটা পিচ্চি ছেলের মাথায় পাটকেল
ছুড়ে মাথা ফাটিয়ে আর বাসায় আসে না। রওনকের দাদু ওকে খোজার জন্য রাস্তায় গিয়ে দেখে রওনক
রাস্তা দিয়ে ঘুরাঘুরি করছে। দাদুকে দেখেই সে কি দৌড়। তার দাদুও সাথে সাথে দৌড়াচ্ছে। পথে একটা মাঝ বয়সী লোক সিগেরেট খেতে খেতে যাচ্ছিলো। অর্ধেক সিগারেট খাওয়া হলে সে সিগারেটটা ফেলে দেয় তখন রওনক দৌড়ানো অবস্থায় সেই সিগারেট তুলে টান দিতেই সে কি কাশি। তখন আর রওনকের বয়স কত? চার কি পাচ।

হা হা হা!! রওনক এই কথা মনে করে একটু উচ্চস্বরেই হেসে দিলো। পার্কের আশেপাশে তাকিয়ে দেখছে কেউ আবারতার দিকে তাকিয়ে দেখছে কিনা। আবারও ভাবনা জগতে প্রবেশ। স্কুল শেষ কলেজে উঠেই সিগারেট খাওয়া নিয়মিত। ১৬ই ডিসেম্বর টিএসসিতে গিয়ে বন্ধুদের সাথে গাজা খাওয়া। তখন অবশ্য সে বলেছিলো এই যেই প্রথম এই যেই শেষ। কিন্তু তার বন্ধুরা বলেছিলো টিএসসিতে নাকি রওনক গাজা খেয়ে মাতাল
হয়নি। তাই সে গাজার আসল মজা পায়নি। এজন্য রওনক আবারো একদিন গাজা টেষ্ট করতে ইচ্ছা পোষন করলো। এর পর থেকেই নিয়মিত গাজা খাওয়াও শুরু হলো। তখন রওনকের সময়টা আধুনিক আধুনিক টাইপের ছিলো। তাই কোন অকেশন হলেই হত রওনক ও তার বন্ধুরা মিলে সেই অকেশন বোতলে করে উদযাপন করতো এভাবে অকেশন থেকে কখন
প্রফেশন হলো সেটা রওনকও বুঝতে পারেনি।

এভাবেইপাল্লায় পড়ে একসময় সিরিঞ্জে করেও ড্রাগ নেওয়া শুরু করলো। এরপর থেকে বাসায় নানান ঝামেলা শুরু হলো। এক পর্যায়ে রওনককে বকাবকি করাই থামিয়ে দিলো বাসা থেকে, কারণ কোন লাভ নাই বকাবকি করে, যা তাই!! বাসা থেকে ঠিক হলো ওকে রিহ্যাবে দিয়ে দেওয়া হবে। ততক্ষণে অবশ্য অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। সিতীও এরইমধ্যে রওনককে ছেড়ে দিয়েছে। অবশ্য রওনকেরও খুব ইচ্ছা ছিলো রিহ্যাবে থেকে ফিরে নতুন করে আবার সব কিছু শুরু করার।

আজ রওনক পার্কে বসে আছে মরণব্যাধি ক্যান্সার বহন করে। কিন্তু এটা রওনক জানে না। আসলে বাসা থেকেই জানতে দেয়নি। রিহ্যাব থেকে ফিরে আসার পরে ডাক্তারি চেকাপ করানোর জন্য রওনককে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রিপোর্টে রওনকের বাবা মা জানতে পারে তাদের একমাত্র ছেলের ক্যান্সার হয়েছে। আর হয়তো দুমাস বাচতে পারে। রওনকের মা প্রতিদিন জলিল
সাহেবের বুকে মুখ লুকিয়ে কাদে যাতে রওনক কিছু
না জানতে পারে। জলিল সাহেব হচ্ছে রওনকের বাবা। খুব কঠিন মানুষ। কিন্তু রেহানা বেগমের (রওনকের মা) সাথে তাল মিলিয়ে তিনিও প্রতিদিন কাদেন। যতই কঠোর হোক মায়ের কোল আর বাবার পিঠেই তো রওনক বড় হয়েছে।

সীতিও ক্যান্সারের ব্যাপারটা জানে না। জানলে হয়তো খুব কান্নাকাটি করতো। হয়তো দৌড়ে ছুটে আসতো রওনককে দেখতে। হয় করুনা করেই না হয় ভালোইবেসে। আবার হয়তো কোনদিন
জানতেই পারলো না। অথবা একদিন মৃত্যুর খবর
পেয়ে ছুটে আসলো রওনককে দেখতে। অনেক
কান্নাকাটি করলো। আবার কিছুদিন পরে ভুলেই গেল। কি জানি কি হয়!!

রওনক!! তুমি এখানে বসে কি করছো??
ইশ যদি সীতি পিছন দিক দিয়ে এসে আমার পিঠে সেই পরিচিত হাতের স্পর্শ দিয়ে ডেকে এই
কথাটা বলতো তাহলে আমি তোমাকে বলতাম।
সীতি দেখো আমি ভালো হয়ে গেছি। আমি সত্যিই আগের মত ভালো হয়ে গেছি। আমরা আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করবো।

নাহ রওনকের আর সেই ইচ্ছা কখোনোই পুরণ হবে না। কারণ ক্যানসারের সাথে যে এখন রওনকের রিলেশন রয়েছে।

Image result for CANCER

Popular posts from this blog

প্রথম দেখাতে আমি প্রেমে পরেছি তোমার..

পাত্রী যখন ছাত্রী.....অসাধারণ একটা ভালোবাসার গল্প আশা করি ভালো লাগবে...

এই পৃথিবীতে নিঃশ্বাস নিতে যে বড্ড কষ্ট হচ্ছে।

পাশের বাসায় আসা নতুন ভাড়াটিয়ার সুন্দরী মেয়েটিকে হঠাৎ আমার নজরে পড়লো ।

Keno Ei Nishongota PARTHO - Lyrics IN BANGLA