টিউসন জিবন থেকে তুলে ধরলাম...........

ভাইয়া কিছু ভাবছেন?
  অর্পির এমন প্রশ্নে ভাবনার রাজ্যের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি।
- নাহ! তেমন কিছু না। কই তোমার লেখা হয়েছে?
: হ্যা! অনেকক্ষণ আগে। এতক্ষণ আপনাকে দেখছিলাম।
- আমাকে আবার দেখার কি হলো?
কই খাতাটা দাও।
অর্পি মুচকি হেসে খাতাটা আমার দিকে দিল। যে হাসিতে অদ্ভুত একটা রহস্য হাতছানি দিচ্ছে বোঝাই যাচ্ছে।
কি ব্যাপার হাসছো যে?
না। এমনি।
খাতার দিকে চাওয়া মাত্র আমি অবাক হয়ে গেলাম। যেখানে অর্পিকে আমি ম্যাথ করতে দিয়েছিলাম সেখানে উল্টা পেন্সিল দিয়ে আমার একটা ছবি একে ফেললো।
মুখে হাত দিয়ে ভাবুক আমি পার্থ । ছবিটা দেখে যে কেউ বলবে আমি ছবির পোজে ছিলাম। মেয়েটার আর্ট সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
.
এখনো আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আমার মুখ থেকে সামান্য হাসির চেষ্টা।
ভাল হয়েছে। কিন্তু ম্যাথ কোথায়? ছবি আঁকলে যে?
ম্যাথ করতে ইচ্ছা করছে না। ভাইয়া আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর।
হইছে এতো প্রশংসা করতে হবে না। ৫ মিনিটের মধ্যে ম্যাথ করে ফেলবে।
ইচ্ছে করছে না।
মানে কি? আন্টি কে ডাকবো!
হাহাহাহা
হাসির কি হলো?
মা বাসায় নেই।
কোথায় গেছে?
মায়ের বোন আমার মাসি অসুস্থ, হাসপাতালে দেখতে গেছে।
যাক এ যাত্রায় বেঁচে গেলে।
  বড় বোন বাসায় আছে? ডাকবো?
নাহ থাক! দরকার হবে না।
ভাইয়া চা খাবেন নাকি কফি।
আপাতত কিছু না। তুমি পড়া করো।
বলেন না প্লিজ। আজকে আমি নিজ হাতে বানিয়ে খাওয়াবো।
বাহ! তাই নাকি। পিচ্চি মেয়ে চা ও বানাতে পারে!
- আমাকে পিচ্চি বলবেন না, আমি ১০ম শ্রেণীতে পড়ি। আমি বড় হয়ে গেছি।
: আচ্ছা বলবো না। কফি হলে মন্দ হয় না।
অর্পিকে মনে হচ্ছে বিরাট বড় একটা গুরু দায়িত্ব দিয়ে ফেলেছি। যা তাকে এখন সামলাতে হবে। আসল কথা হচ্ছে এই কফি খাওয়া যাবে তো?
.
আমি চেয়ারে বসে আছি। হাতে তেমন কোন কাজ নেই অপেক্ষায় আছি অর্পির হাতে কফি খেয়ে আজকের মতো বিদায় হবো। কিন্তু কখনো কল্পনা করি নাই বিদায় টা আমার শেষ বিদায় হবে।
.
আমার সামনে একটা ডায়রি। অর্পির ডায়রি হয়তো বা। ছোটবেলা থেকে আমি বই পোকা ছিলাম। কোন কিছু লেখা দেখলেই আবার পড়তে ভাল লাগে। কিন্তু কারো ব্যক্তিগত ডায়রি পড়া ঠিক হবে না ভেবে আর পড়া হলো না। ফ্যানের বাতাসে ডায়রির পাতা উল্টাচ্ছে আমি আসার কিছুক্ষণ আগেও হয়তো ডায়রি লিখতেছিল। ডায়রি টা আমার সামনে হওয়ায় অস্পষ্ট ভাবে লেখা দেখলাম পার্থ ভাইয়া কে আমার মনের কথা গুলা বলা উচিত। কি আশ্চর্য! আমার সাথে আবার কি কথা। আমি ডায়রি পড়বো কি পড়বো না দ্বিধা ভেঙে হাতে নিলাম। হ্যা আজকের লেখা।
গোটাগোটা হাতের লেখায় লিখেছে।
.
আমি অনেক দিন ধরে বলতে চেয়েও বলতে পারছি না। ভেতর থেকে কে যেন আটকে রেখেছে। খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারছি না। পারছি না পার্থ ভাইয়া কে আমার মনের কথা বলতে। আমি যে তাকে কত ভালবাসি। আমি অনেক দিন ধরে ভাবছি বলবো কিন্তু সুযোগ পাচ্ছি না। আমার এক বান্ধাবী বলছে যেন দেরি না করি তাহলে নাকি সারা জীবন পস্তাতে হবে, না আমি পস্তাতে চাই না। চাই না পার্খ ভাইয়া কে হারাতে। আজকে বাসায় মা নেই। আজকে আমি আমার মনের কথা বলতে চাই। আচ্ছা ভাইয়া যদি মাকে বলে দেয়। তখন কি হবে?
প্রশ্নবোধক দিয়ে আজকের লেখার ইতি টানা। হয়তো বাকি কথা আমি চলে যাওয়ার পর লিখবে। ছবি আঁকা, কফি খাওয়ানো পরে ডায়রিতে যুক্ত করবে।
পিছনের পাতা গুলো উল্টালাম আমি সত্যিই আবাক হয়ে গেলাম। অর্পিকে পড়ানোর ২ মাসে কোন কিছুই হয়তো বাদ রাখে নাই। কোন দিন কি পড়ে আসছি, কোন কালারের শার্ট পড়েছি তাও লিখে রেখেছে। লিখে রেখেছে আমাকে তার অজস্র কল্পনার কথা, আছে অনুভূতি।
বোঝাই যাচ্ছে এ মেয়ে কতটা আবেগপ্রবণ।
.
ধন্যবাদ দিয়ে অর্পির হাত থেকে কফির কাপ হাতে নিলাম। প্রথম চুমক দিয়ে মনে হলো কফিটা অনেক পুড়ে গেছে এবং হালকা তিতা লাগছে। খুশি করার জন্য ভাল হয়েছে বলে মুখ থেকে কফির মগ টা হাতে নিলাম। আমার কাছে মনে হচ্ছে অর্পির বিকাল টা সার্থক। হয়তো ধন্যবাদের প্রত্যাশী ছিল। দাঁড়িয়ে আছো কেন অর্পি বসো, তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। ভাইয়া আপনার সাথেও আমার কিছু পারসোনাল কথা আছে।
তোমার সাথে আমার কোন পারসোনাল কথা থাকতে পারে না।
তোমার কাছে থাকবে অজস্র প্রশ্ন। যা আমাকে বিব্রত করবে। কিন্তু তা না হয়ে তোমার আচরণে আমি বিব্রত হয়ে যাচ্ছি। তোমার মনযোগ থাকবে পড়ার দিকে, আমার খোচাখোচা দাড়ির দিকে না।
তুমি নোট করবে আমি যা পাড়াচ্ছি তাই।
আমাকে কোন শার্টে ভাল লাগে তা নয়।
দেখ অর্পি তুমি ভুল করছো। আর এটাই স্বাভাবিক তোমার বয়স কম।
ভাইয়া আমি বাচ্চা না। আর ভালমন্দ বোঝার মতো বয়স টা আমার নিশ্চয় হয়েছে। আবেগ দিয়ে সব কিছু সহজ মনে হয়। কিন্তু বাস্তবতার কাছে আমরা সবাই পরাজিত। ভাল করে পড়ালেখা করবে, তোমার ফ্যামিলি তোমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে আশা করি গঙ্গার জলে বিসর্জন দিবে না।
আমি উঠি। ভাল থাকবে।
ভাইয়া প্লিজ।
দুঃস্বপ্ন মনে করে যতো তাড়াতাড়ি ভুলতে পারবে ততই তোমার জন্য মঙ্গল।
.
অর্পির আর বুঝতে বাকি রইলো না, আমি আর তাকে পড়াতে আসবো না। হয়তো হবে না আর কোন কথা। দু চোঁখ বেয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে।
কম বয়সী মেয়েরা আবেগপ্রবণ হয়। যা প্রশ্রয় দিলে আরও বাড়ে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পর্কে কোন ধারনা থাকে না। না থাকে জীবনের প্রতি।
.
বাসা থেকে বেড়িয়ে চলে আসলাম। সামনের চায়ের দোকান থেকে চায়ের কাপে মুখ দিয়ে ভাবছি। নাহ মোটেও অর্পির কথা না। ভাবছি আর একটা টিউশনির কথা। এই টিউশনি টা হাতছাড়া হলে চলতে একটু সমস্যা হয়ে যাবে। যার জন্য আর একটা টিউশনি যোগাড় করতে হবে।
.
বাস্তবতার কাছে আমরা সবাই পরাজিত। পরাজিত নিজের কাছে। যে ছেলেটার এই সময় ঘুম থেকে উঠে চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়ার কথা ছিল, সে আজ ২টা টিউশনি শেষ করে ক্লান্ত। রাজ জেগে মুভি কিংবা বইপড়া যার নেশা ছিল সে আজ অন্যের আস্যাইনমেন্ট কিংবা ব্যবহারিক খাতা করতে করতে রাত পার হয়ে যায়।
অন্যের মতো আমার ও ইচ্ছা হয় গুড মর্নিং কিংবা গুড নাইট বলার মতো কেউ থাকুক। শাষন বারনে চলে যাক বদঅভ্যাস গুলো। মন চাইলেও অনেক ইচ্ছাকে মাটিচাপা দিতে হয়। বিসর্জন দিতে হয় নিজের স্বত্বা কে। গল্পটা এখানে শেষ না, হয়তো তোলা থাকবে  অসমাপ্ত ডায়রিতে।
.
                          Image result for tutor life

Popular posts from this blog

প্রথম দেখাতে আমি প্রেমে পরেছি তোমার..

পাত্রী যখন ছাত্রী.....অসাধারণ একটা ভালোবাসার গল্প আশা করি ভালো লাগবে...

এই পৃথিবীতে নিঃশ্বাস নিতে যে বড্ড কষ্ট হচ্ছে।

পাশের বাসায় আসা নতুন ভাড়াটিয়ার সুন্দরী মেয়েটিকে হঠাৎ আমার নজরে পড়লো ।

Keno Ei Nishongota PARTHO - Lyrics IN BANGLA