“জীবন”

১ম পর্ব!!!
.
১৯৯০! বয়স ৮ অথবা ৯। আমরা ৩ ভাই। ঠিক এই সময় আমার বাবা-মা আলাদা হয়ে যায়। আমরা ৩ ভাই এবং মা মিলে খুলনাতে থাকতাম। মা আমার ছোট এবং বড় ভাইকে নিয়ে আলাদা হয়ে গেলো এবং আমার গানের টিচার কে বিয়ে করলেন। আমাকে ঢাকাতে বাবা’র কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হল। আমি আর বাবা ২জন ছোট্ট ১রুমে থাকা শুরু করলাম। আমাকে দেখা-শুনা করার কেউ নেই, কোন কিছুতে বাধা দেওয়ার কেউ নেই তাই খুব বেশি দুষ্টু হতে সময় লাগেনি। এই ভাবে কাটল ১-২ বছর। এর মাঝে মা খুব সামান্যই আমার খোঁজ নিতেন। আমি যে কেউ, হয়ত ভুলে গিয়েছিলেন।
একবার খুব অসুস্থ হেয় হাসপাতালে থাকতে হল কিছুদিন। তখন বাবা খুলনায় মা’র কাছে খবর পাঠালেন, জানতে পারলাম মা ঢাকা শ্যামলী তে থাকেন। বাবা মা’র কাছে প্রস্তাব দিলেন আমাকে তার সাথে রাখার জন্য এবং সব রকম খরচ বাবা বহন করবেন। আমি মা’র কাছে থাকা শুরু করলাম। মাত্র কিছু দিন পর বাবা’র ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হল। বাবা আর কোন খরচ বহন করতে পারবেন না। খরচ বহন করতে না পরলে আমাদের ঢাকাতে থাকা হবে না। তাই বাবা’র সাথে গ্রামের বাড়ী কুমিল্লাতে যেতে হাবে।
আমি রাজি হলাম না। মা জামালপুর চলে যাবেন কিন্তু আমাকে সাথে নেওয়া সম্ভব না। কারণ তার স্বামী জামালপুর থাকেন এবং তিনি খরচ বহন করবেন না। আমার বড় ভাই তখন ছোট্ট একটা জব করে। মা চলে গেলেন জামালপুর, বাবা কুমিল্লা যাবার সময় ১০০টাকা দিয়ে চলে গেলেন। আমি থাকলাম বড় ভাই এর সাথে। কিন্তু বিধি বাম, ১দিন পর ভাই এর রুমমেট আমাকে থাকতে দিতে নারাজ। বের হেয় গেলাম সেখান থেকে।
আমার একটাই পথ খোলা, কুমিল্লা যেতে হবে। কিন্তু জানি না কিভাবে যেতে হয়। কমলাপুর রেল ষ্টেশনে এসে সারা রাত থাকলাম। রাত কটা বাজে জানি না, প্লাটফরমে শুয়ে আছি। হটাত পুলিশ এসে পেটানো শুরু করলো সবাইকে। আমি ভয়ে সেখান থেকে বের হয়ে গেলাম। খুব মনে আছে সেদিন রাতে খুব বৃষ্টি ছিল। আমার কাছে টাকা বলতে ছিল ১০০টাকা। কুমিল্লা যেতে কত টাকা লাগে জানি না তাই রাতে কিছুই খাওয়া হয়নি। সারা রাত বৃষ্টি আর ক্ষুধা জালায় পার করলাম।
ভোর বেলায় এক মুরব্বি’র সাহায্য নিয়ে সকাল ১০.৩০মি: এ কর্ণফুলী ট্রেনের টিকেট কাটলাম ৬৫টাকা দিয়ে। ঢাকা থেকে ১০.৩০মি: যাত্রার কথা থাকলেও যাত্রা শুরু হল দুপুর ২.০০টার পর। কুমিল্লা, নাঙ্গলকোট যখন পৌঁছলাম তখন অনেক রাত। ষ্টেশনে শুধুই আমি একা। জীবনে কোন দিন মনে হয় এতো ভয় পাইনি। আমি জানি না এ পর কিভাবে যাব/যেতে হয়। প্ল্যাটফরম থেকে বের হয়ে দেখলাম এক রিক্সা। আমার জানা মতে বাড়ী’র পাসে জ্জোড্ডা বাজার। ষ্টেশন থেকে প্রায় ৭কি:মি:। রিক্সা অতো দূরে যেতে রাজী হল না। সব কিছু খুলে তাকে বলার পর হয়তো আমার প্রতি তার দয়া হল। তবুও কিন্তু থেকে যায়। সে আমাকে অর্ধেক রাস্তা পৌঁছে দেবে, বাকি পথ আমাকে হেঁটেই যেতে হবে। যাই হোক, রাতে বাড়ী পৌঁছলাম।
আমরা কখন গ্রামে থাকিনি, তাই বাড়ীতে বেশি দিন থাকা হল না। আমাকে আবার ঢাকা পাঠানোর পরিকল্পনা করা হল। যদিও বুজতে পারছিলাম বাবা আবার বিয়ে করবেন, তাই আমাকে ঢাকা পাঠানোর এই পরিকল্পনা। বড় ভাই এর সাথে কথা বলে আমাকে আবার ঢাকা পাঠানো হল ২০০০টাকা খরচ দেওয়ার কথা বলে। শুরু হল আর এ জীবন।
ভাই এর রুমমেট আমার সাথে “কাজের লোক’র” মত আচরণ করতো আমার বড় ভাই কিছুই বলতো না। কত যে দিন পার করেছি না খেয়ে বলতে পারবো না। বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশ দেখে কত চোখের পানি ফেলছি....। এক দিন বাবা ঢাকা আসলেন আমার অবস্থা দেখে ঠিক করলেন তিনি ঢাকা চলে আসবেন এবং চাকির করবেন। মা আমার কথা জানার পর প্রস্তাব দিলেন আবার তিনি ঢাকা আসবেন। আমরা ৩ ভাই আর মা আবার এক সাথে থাকা শুরু করলাম।

“জীবন” ২য় পর্ব!!!
.
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসাবে জব শুরু করলাম। খুব অল্প সময়ে (৩ বছর) সারা ঢাকাতে আমার নাম ছড়িয়ে পরল। খুব ভালই কাটছিল। হয়তো বিধাতা আমার সুখ দেখতে পরেন না। হটাত ২০০৩ এর ১৪ই জুলাই মাসে আমার সব কিছু এলোমেলো করার উদ্দেশ দিয়ে একটি মেয়ে কে পাঠালেন। নাম পরী। অল্প সময়ের ব্যবধানে বুজতে পারলাম, তাকে ছাড়া আমার চলবে না। না দেখেই তাকে অনেক ভালোবেসে ফলছি। প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাদের কথা হত। আমার মন খারাপ হলে ভাল করে দিত। লাঞ্চ করতে একটু দেরি হলে, আমার খবর আছে সে দিন। কেমন জানো ঘোরের মাঝে পড়ে গেলাম। পরী আমার জীবনে আসার কিছু দিন আগে প্রিন্টিং জগত পৃথিবীর সবচেয় উন্নত টেকনোলোজি’র উপর ট্রেনিং ও পড়াশুনা করি। অনেক জব অফার আসে আমার কাছে দেশের বাইরে থকে। কিন্তু আমি রাজি হতাম না। হটাত এক দিন সেই আমাকে দেখা করতে বলে। আর ঠিক এক দিন পর কোন কিছু না বলে যোগাযোগ বন্ধ করে দিল। অনেক চেষ্টা করেও টার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। পাগলের মত হয়ে গেলাম। আমার ডেক্স এর ফোন বাজলে মনে হতো তার ফোন। সকাল ৮.০০ থেকে অনেক রাত করে অফিস এ থাকতাম, যদি সে ফোন করে আর আমাকে না পায়। ডেক্স বসে থাকলে হটাত মনে হতো, সে আমার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। বুজতে পারছিলাম আমার পরিণতি খুবই ভয়াবহ হতে যাচ্ছে।
মার্চ ২০০৫, কষ্ট সইতে না পেরে পাড়ি জমালাম দেশের বাইরে। যা ভেবেছিলাম হল তার উল্টো। প্লেন টেক-অফ করতেই পরী আমার কল্পনাকে ঘিরে ধরল। কোন ভাবেই নিজেকে সামাল দিতে পারছিলাম না। ফলাফল, তার সাথে যোগাযোগ। ধীরে ধীরে আবার আগে সেই পরীকে ফিরে পেলাম। এ ভাবেই চলছিল অনেক দিন। ঠিক করলাম, ২৩শে ডিসেম্বর তার জন্মদিনে, আমি দেশে আসব। দেশে আসার কিছুদিন আগে, ও জানালো তার জন্য পাত্র খোঁজা হচ্ছে। যে কোন দিন হয়তো জানাবো তরা বিয়ে হয়ে গেছে।
এ কথা শুনার পর, মাথায় পুরো সৌরজগৎ ভেঙ্গে পড়লো। কোন উপায় না দেখে, তাকে আবার ফোন দিলাম, এবং আমার মনের কথা গুলো জানালাম। দেশে ফিরে সে দিনই তার সাথে দেখা করলাম। শেষ বিকেলের আলোতে কলা পাতা সবুজ ড্রেসে তাকে যে কি সুন্দর লাগছিল বলে বোঝাতে পারবো না। সে তখন আমার কাছে জানতে চাইলো আমার উত্তর টা কি এখন দেবে কি না? কিন্তু আমি তাকে দেখে এবং যদি “না” বলে এই ভয়ে মানা করে দিলাম। পরদিন তার কাছে জানতে চাইলে, সে “না” বলে দিল। কারণ জানতে চাইলে সে বলে “সে আমাকে নিয়ে কখন এই ভাবে চিন্তা করে না। তাছাড়া, আমার ফ্যামিলি’র সমস্যা’র কারণে তার বাবা মা আমাকে মেনে নিবে না। সে আমাকে ভাল বন্ধু হিসাবে দেখতে চায়”। সে যখন এই সব কথা বলছিল, আমার দুচোখে তখন বাঁধ ভাঙ্গ কান্না। তাকে কিছু না বলে ফোন কেটে দিলাম। তার ভালবাসা পাওয়ার জন্য অনেক আকুতি-মিনতি করলাম, কোন লাভ হল না। এক বার সে বলেই দিল যাতে তাকে আর ফোন না করি। মানসিক ভাবে অনেক ভেঙ্গে পরেছিলাম যে কারণে আমার আর জবে ফিরে জাওয়া হল না।
প্রায় ৬মাস বেকার থাকার পর Enfatico তে জব নিলাম।
৪ বছর পর, একদিন পরী আমাকে ফোন করে দেখা করতে বলে। ধানমন্ডি ৮নং এ দেখা করি তার সাথে। সে জানালো, “আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হেয় যাওয়ার পর সে বুজতে পেরেছে আমি তার জন্য কি ছিলাম”।
কেন জানি তার সে কথা বিশ্বাস করতে পরলাম না মন থেকে। আর তাই কোন উত্তর দিলাম না। সে দিন তার এক বান্ধবী ছিল তার সাথে “সুক্তি”। এর পর ২/১ দিন পর-পর পরী’র সাথে দেখা হয়। বেশীরভাগ সময় সুক্তি আমাদের সাথেই থাকতো। কিন্তু সে আমাদের ব্যাপার টা জানতো না। তাছাড়া আমাদের মাঝে কোন রিলেশন’ও ছিলনা। এই ভাবেই চলছিল। হটাত একদিন পরী জানালো তার সাথে একটি ছেলের রিলেশন হয়েছে। ছেলেটি ৩/৪ বছর ধের তার সাথে আছে। ছেলেটি তাকে প্রোপজ করায় সে রাজি হেয় গেল। আবার আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল, কিন্তু তাকে কিছু বুজতে দিলাম না।
এক সময় লক্ষ্য করলাম সুক্তি মেয়ে টি আমাকে নিয়ে চিন্তা করছে। তাকে অনেক মানা করলাম, বুঝালাম আমার পক্ষে সম্ভব না। তবুও সে করনে-অকারণে আমার সাথে দেখা করত। সুক্তি’র কাছ থেকে জানতে পারলাম সেই ছেলেটার সাথে পরী’র রিলেশন ৩/৪ বছর ধেরই চলছে। এবং তাদের দৈহিক সম্পর্ক আছে। রাগে দুঃখে পরী’র সাথে আবার যোগাযোগ বন্ধ করে দিলাম। কিন্তু সুক্তি’র সাথে যোগাযোগ ছিল। হয়তো পরী/ সুক্তি এক সাথে আছে, পরী ফোন দিলে ফোন ধরতাম না আবার সুক্তি ফোন দিলে কথা হতো । তখন খুব ভাল ভাবেই বুঝতাম পরী জেলাস। ২১শে ফেব্রুয়ারী, ২০১০। সকালে সে দেখা করতে চায়, সরাসরি মানা করে দেই। বলে, আমার প্রিয় কালো শাড়ী পড়ে সে ইডেন কলেজ এর গেঁটে অপেক্ষা করেছে। অনেক মানা করার পরও তার পাগলামি বাড়তে লাগলো। ইচ্ছা’র বিরুদ্ধে বিকাল বেলায় দেখা করতে গেলাম আর কোন দিন সে আমার সাথে যোগাযোগ করবে না এই সর্তে। যা দেখলাম, তা আমি কল্পনাও করিনি। সারাদিন না খেয়ে মুখ টা একদম শুকিয়ে গেছে, সারাদিন রাস্তায় থাকার কারণে সাঁজ-গোঁজ অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। আমার যে তখন কি কষ্ট....। সে কিছু বলতে চাইছিল, কিন্তু না বলেই চলে গেল।
সে এর পর ৫/৭ দিন পরী’র সাথে কথা হয়নি। সুক্তি’র কাছ থকে জানতে পারলাম ২১ তারিখে পরী’র এনগেইজমেন্ট হয়েছে। আর ২১ তারিখে রাত থেকে সে খুব অসুস্থ। ২২-২৫ তারিখ পর্যন্ত সে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। আর পারলাম না। সাথে সাথে ফোন দিলাম, তার কি কান্না। আমাকে সে জানালো, সে আমাকে অনেক ভালবাসে, কিন্তু কোন দিন আমার হতে পারবে না।
অনেক চেষ্টা করেছি তাকে ফেরানোর, হয়নি। আমার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে সে এখন অন্য এক জন এর স্ত্রী!

“জীবন” শেষ পর্ব!!!
.
পরী’র বিয়ে হল এপ্রিল, ২০১০। এ জীবন টা একটা অভিশপ্ত জীবন। এর শেষ দরকার।
একদিন সুক্তি আমাকে অনেক রিকোয়েষ্ট করলো, গাজীপুর তার বয় ফ্রেন্ড এর সাথে ঝামেলা হয়েছে, তাকে সেখানে নিয়ে যেতে। ভাবলাম যাই দেখি।
সুক্তি আমাকে নিয়ে গেলো তার পরিচিত এ বাসায়। এই বাসার ২টা বাচ্চাকে তার বয় ফ্রেন্ড পড়ায়। সেই বাসায় একটি মেয়ে’র সাথে পরিচয়। তেমন কথা হয় নি তার সাথে। বেশ রাত হয়ে যাবার কারণে আমাকে তাড়াতাড়ি ঢাকা ফিরতে হবে আর অপেক্ষা করলাম না। সুক্তি সেই বাসায় থেকে গেল। আমি ঢাকাতে চলে আসলাম। ৫/৬ দিন পর সুক্তি’র সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে সেই মেয়েটির কথা উঠল। সে নাকি আমাকে অনেক পছন্দ করছে। সে খুব ভাল একটা মেয়ে। সুক্তি তাকে আমার সম্পর্কে সব কিছু বলছে। এখন সে আমার সাথে দেখা করতে চায়। অনেক চিন্তা ভাবনার পর রাজী হলাম। গুলশান এ তার সাথে দেখা হল। নাম রোমানা। সারাদিন এক সাথে থাকলাম। আমার সব অতীত তাকে জানালাম। সব শুনে প্রধানমন্ত্রী’র কার্যালয় এর সামনের রাস্তায় সবার সামনে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে “আমাকে বিয়ে করবে? আমি তোমাকে কোন দিন কষ্ট দিবো না। তার ফ্যামিলি’ও আমার মত আলাদা।” ভাবলাম যাক অন্তত সে হয়তবা আমাকে বুজতে পারবে।
রোমানা তার মা’র সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেয়। কিছুদিনের মধ্যে আমি তাদের ফ্যামিলি’র একজন হয়ে গেলাম। রোমানা চট্টগ্রামে থাকে নানা-নানীর কাছে। গাজীপুরে ৩/৪মাস পর পর বেড়াতে আসে।
সুক্তি আমাকে রোমানা’র সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় ঠিক, কিন্তু ৩/৪ দিন পর থেকে সে বলা শুরু করে রোমানা খুব খারাপ, তার বিয়ে হয়ে গেছে, সুক্তি’র কাছে প্রমাণ আছে। কিন্তু সে আমাকে দেবে না। কিছুই বুজতে পরছিলাম না। রোমানাকে সাথে নিয়ে সুক্তি ফোন দিলে সে কথা বলতে চাইত না। বুজতে পারলাম সুক্তির কোন মতলব আছে।
আমার সাথে পরিচয় হবার প্রায় ৩মাস পর রোমানা চট্টগ্রামে যেতে চাইল। রোজ কথা বলার কথা থাকলেও ২ মাসে হাতে গোনা মাত্র ক’বার তার সাথে কথা হল আমার। ২মাস পর আবার সে গাজীপুর আসল। রাগে আর অভিমানে তার সাথে কথা বলতাম না। কিছুদিন পর সে খুব জরুরী ভাবে আমাকে দেখা করতে বলে। দুপুরে তার বাসায় গিয়ে দেখি, বাসায় সে একা। সে দিন সে আমার সাথে সেক্স করতে চায়। হয়তো কেউ আমাকে বিশ্বাস করবেন না, আমি সরাসরি তাকে মানা করি। কিন্তু কোন লাভ হয়না। তার পর থেকে কেমন যেন একটা মায়া জড়িয়ে ধরল আমাকে।
রোমানা’র মা সব সময় বিয়ের কথা বলত, আমি রাজি থাকলেও রোমানা বলতো, ২০১১ এর জানুয়ারী তার বাবা দেশে আসবে তখন। আমি তাকে প্রচণ্ড বিশ্বাস করতাম তাই তেমন জোর করতাম না।
এর মাঝে এক দিন রোমানা আমাকে আর তার মা’কে জানালো, সে বিয়ের জন্য রাজী। সে দিন ছিল সোমবার। ঠিক হল শুক্রবার আমাদের আকদ্ হবে। সব ঠিকঠাক করে আমি আমার বাসার দিকে রওনা দিলাম। মনে মনে ঠিক করছিলাম কিভাবে রোমানা’র কথা বাসায় বলব, আকদ্ এ কাকে আসতে বলবো। আমার অবস্থা “গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল”। রোমানা’র SMS: “জান বাসায় ফিরে কাউকে কিছু বলবা না। আমি রাতে ফোন দিব। আমার সাথে কথা না বলে কাউকে কিছু জানাবে না।“
কথা হল রাতে, তার বাবা ১৫দিন পর দেশে আসবে। বাবা’র সাথে তার কথা হয়েছে, বাবা আগে আমার সাথে কথা বলতে চান। অনেক কষ্ট পেলাম কিন্তু তাকে বুজতে দিলাম না। সরল মনে তার কথা বিশ্বাস করলাম।
১৮ই ডিসেম্বর ২০১০, রোমানাকে নিয়ে সারা দিন ঘুরে বেড়ালাম। সে দিন সে আমাকে জানালো, সে ৩/৪ দিন এর জন্য চট্টগ্রামে যেতে চায়। প্রথমে রাজী হলাম না। তার পর অনেক কান্না কাটি করে সে আমাকে মানিয়ে নিলো।
২৮শে ডিসেম্বর ২০১০, সকালে সে চট্টগ্রামে চলে গেল। এয়ারপোর্ট থেকে তার বাস এর সাথে সাথে আমি বাইক চালিয়ে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত আসছি। যত দুর পর্যন্ত বাসটি দেখা যায় তাকিয়ে ছিলাম।
সেই থেকে শুরু হল তার ছলনা। আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিল। তার মা’র কাছে জানতে চাইলে বলত তারা রোমানা’র কোন খোজ জানে না। পাগলের মত হয়ে গেলাম। রোমানা মাঝে মাঝে SMS করত। আমি Reply দেওয়ার আগেই মোবাইল বন্ধ।
আর পারলাম না, আর পারলাম না। বাধ্য হলাম নিজেকে শেষ করে দিতে। ৩৮টা ঘুমের ঔষধ খেয়ে অবশেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৩২নং ওয়ার্ড। হা হা হা। হায়রে ভালবাসা!!!! ৩২নং ওয়ার্ড এর করিডোরে শুয়ে আছি, রোমানা’র ফোন..... “নাটক করার আর জায়গা পাও না”। ক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো চোখের কনে কে জানে। কোন কথা না বলে ফোন কেটে দিলাম।

আজ প্রায় ২বছর। ভালবাসা, বাবা, মা, জব সব হারিয়ে আজ আমি ধংশের শেষ খেলায় মেতে উঠেছি। এখন আর কষ্ট হয় না। এখন আমি এক অন্ধকার জগত এর মানুষ। সত্যিকার ভালবাসা’র চরম মূল্য দিয়ে যাচ্ছি। বুদ্ধদেব গুহু’র একটা লাইন আছে না-
“আলোকিত, তবুও অন্ধকার! জনাকীর্ণ, তবুও জনশূন্য! অনেকটা স্নিগ্ধ রায় চৌধুরীর বুকের মত”
শুধু একটাই শেষ ইচ্ছা, এক বার, মাত্র এক বার আমি বিধাতার কাছে জানতে চাই “কি আমার অপরাধ!!!”
আপনারা কেউ কি বলতে পারবেন????
.
                                       Picture

Popular posts from this blog

প্রথম দেখাতে আমি প্রেমে পরেছি তোমার..

পাত্রী যখন ছাত্রী.....অসাধারণ একটা ভালোবাসার গল্প আশা করি ভালো লাগবে...

এই পৃথিবীতে নিঃশ্বাস নিতে যে বড্ড কষ্ট হচ্ছে।

পাশের বাসায় আসা নতুন ভাড়াটিয়ার সুন্দরী মেয়েটিকে হঠাৎ আমার নজরে পড়লো ।

Keno Ei Nishongota PARTHO - Lyrics IN BANGLA