বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী এবং বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ

মুজিবুর রহমানের স্বপ্নপূরণের এক উল্লেখযোগ্য ধাপ

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১

স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ কিঃ মনুষ্যবিহীন ১ টি অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্র বা ভূ-পৃষ্ঠ থেকে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় (১৬০ কিলোমিটার হতে ৩৬০০০ কিলোমিটার) অবস্থান করে পৃথিবীকে একটি সময়ান্তে পরিভ্রমণ করে থাকে (পরিভ্রমণকারী স্যাটেলাইট) অথবা পৃথিবী যে গতিতে নিজ অক্ষে আবর্তন করে বা ঘোরে সে গতির সাথে আবদ্ধ থেকে নিজস্ব অবস্থানে স্থির থাকে (স্থির স্যাটেলাইট) এবং সামগ্রিকভাবে এটি পৃথিবীস্থ একটি স্টেশন হতে কম্পিউটার প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। পক্ষান্তরে, অকৃত্রিম উপগ্রহ হচ্ছে প্রাকৃতিক বিশালাকার বস্তুপিন্ড যা একটি গ্রহের বা বস্তুর চারিদিকে নির্দিষ্ট দূরত্বে একটি সুনির্দিষ্ট গতিতে পরিভ্রমণ করে থাকে, যেমন- পৃথিবীর চাঁদ। ‘‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’’ একটি স্থির কৃত্রিম স্যাটেলাইট।

কৃত্রিম উপগ্রহের সূচনালগ্ন ও ব্যবহার উপযোগিতাঃ তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়া) কর্তৃক বিশ্বের ইতিহাসে সর্বপ্রর্থম কৃত্রিম ‘‘স্পুৎনিক- ১’’ মহাকাশে উৎক্ষেপন করা হয় ০৪ অক্টোবর ১৯৫৭ সালে। বর্তমানে সচল কৃত্রিম উপগ্রহের সংখ্যা ১,৭৩৮ টি। এসব বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশলগত কার্যকলাপের মাধ্যমে নানারকম তথ্য-উপাত্ত সংশ্লেষণ ও বিশ্লেষণের দ্বারা দূরযোগাযোগ, জলবায়ু ও আবহাওয়া অনুধাবন, সামরিক নরজদারি, ভূ-পৃষ্ঠ ও মহাকাশ পর্যবেক্ষণ, নানাবিদ গবেষণা কর্মকান্ড সম্পাদনসহ হাজারো রকমের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

এক নজরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট- ১ : বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট- ১ নির্মাণ করেছে বিশ্বের অন্যতম খ্যাতনামা স্যাটেলাইট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থেলেস এলেনিয়া স্পেস। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গায়ে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকার রঙের নকশার উপর ইংরেজীতে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু ১। বাংলাদেশ সরকারের একটি মনোগ্রামও রয়েছে এতে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক দিক নির্দেশনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে সামগ্রিক প্রকল্পটি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন কর্তৃক বাস্তবায়িত হয়। বাংলাদেশ সময় ১১ মে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ তারিখ শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের উৎক্ষেপন মঞ্চ থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট- ১ মহাকাশে পাঠানো হয়। ফ্যালকন-৯ রকেটের নতুন সংস্করণ ব্লক ফাইভ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে নিয়ে যাত্রা করে নিজস্ব কক্ষপথে। রকেট উৎক্ষপনের আধা ঘন্টাখানেক পর স্যাটেলাইট কাঙ্খিত জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার অরবিটে পৌঁছায়।

এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার, টেলিযোগাযোগ ও ডেটা কমিউনিকেশন সেবা পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ ও বাঙ্গালি জাতির অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতায় যোগ হয়েছে আরো একটি মাইলফলক। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট- ১ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে আজ আমরা মহাকাশে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছি। এর মাধ্যমে বিশ্বের ৫৭তম স্যাটেলাইট সদস্য দেশের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হলো বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট- ১ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হচ্ছে ২ হাজার ৯০২ কোটি টাকা এর মধ্যে সরকারি তহবিল ১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা, অবশিষ্ট অর্থ ঋণ সহায়তা হতে। এই প্রকল্পে সরকারের যে টাকা খরচ হবে তা স্যাটেলাইট ভাড়া দিয়ে ৮ বছরের মধ্যেই তুলে ফেলা সম্ভব হবে। এতে পরবর্তী বছর থেকে এই প্রকল্পকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। স্যাটেলাইট পাঠানোর কাজটি বিদেশে করা হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বাংলাদেশ থেকেই। এজন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে।

এই কৃত্রিম উপগ্রহটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ভি-স্যাট ও বেতারসহ ৪০ ধরনের সেবা দেবে। প্রাকৃতিক দূর্যোগে টেরিস্ট্রিয়াল বা ভূ-অবস্থিত অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্থ হলে সারা দেশে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা বহাল রাখতে এবং পরিবেশ যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ই-সেবা বা অনলাইনভিত্তিক সেবা নিশ্চিত করতে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। দেশের টিভি চ্যানেলগুলো স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ বছরে ১২৫ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এই স্যাটেলাইট পূর্ণাঙ্গভাবে কর্মক্ষম বা চালু হলে সে টাকা দেশেই থেকে যাবে। এইকসাথে এই স্যাটেলাইটের তরঙ্গ ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয়েরও সম্ভাবনা রয়েছে। স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইডথ ও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে ইন্টারন্টে বঞ্চিত অঞ্চল যেমন- পার্বত্য, হাওড়, ইত্যাদি এলাকায় ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া সম্ভব। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট ও ব্যাংকিং সেবা, টেলিমেডিসিন ও দূরনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রসারেও ব্যবহার করা যাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট- ১। প্রাকৃতিক ‍দুর্যোগ তথা বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ইত্যাদির গতিবিধি আরও আগাম এবং আরও নিখুঁতভাবে জানা যাবে এই স্যাটেলাইটের সহায়তায়। ইতিপূর্বে বিভিন্ন উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে পারায় গত পাঁচ বছরে ঘূর্ণিঝড়গুলো আগের মতো ক্ষয়ক্ষতি করতে পারিনি। এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আরও কমিয়ে আনা যাবে নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে। দুর্যোগকালীন দুর্গমতম অঞ্চলে (যেমন-চরাঞ্চল বা হাওরাঞ্চল, গভীর সমুদ্র বা নদীতে মাছ ধরার ট্রলার ইত্যাদিতে) মোবাইল নেটওর্য়াক থাকবে। বিভিন্ন অ্যাপ বা অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করে দুর্যোগকবলিত মানুষ উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে এবং উদ্ধার কর্মীরা সহজে ভূক্তভোগীকে খুঁজে ত্রাণ পৌঁছে দিতে পারবে বা উদ্ধার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবে। ঝড়ের আগের ও পরের ছবির বিস্তারিত তুলনা করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আরও নিখুতভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হবে। এখন একটা বাড়ি হেলে পড়লে চোখে দেখে বিচার করতে হয়। এই উপগ্রহের ছবির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে সামান্য হেলে পড়ার ঘটনাও ধরে ফেলা সম্ভব হবে। ফলে দূর্ঘটনা এড়ানো সহজ হবে বা দুর্ঘটনার উপর আরও বেশী প্রতিরোধমূলক নিয়ন্ত্রণ আনা যাবে। ভূপ্রকৃতির সূক্ষ্ম পরিবর্তন যেমন- খাল বিলে পানির উচ্চতা, নদীর নাব্যতার তথ্য, ইত্যাদি আরও নিখুতভাবে পাওয়া যাবে। এসব তথ্য ব্যবহার করে বন্যার ব্যাপ্তি, সে অনুযায়ী প্রস্তুতি, বন্যা-পরবর্তী সময়ে কোন জমি কবে নাগাদ ফসলের জন্য আবার উপযোগী হবে ইত্যাদি নির্ধারণ করা সহজ ও বাস্তবসম্মত হবে। জলবায়ু পরিবর্তন বা মানুষের প্রভাবে পরিবেশের পরিবর্তন তথা বছরের পর বছর ধরে এলাকার বিল-খাল, রাস্তাঘাট, বসতভিটা, গাছগাছালি, ইত্যাদির কী কী পরিবর্তন হচ্ছে তা উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণ করে সহজে বের করা যাবে। এই তথ্য ব্যবহার করে বাস্তবসম্মত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হবে। এছাড়াও রাস্তাঘাটের নিপুন ডিজিটাল মানচিত্র করা সম্ভব হবে এবং সেই মানচিত্র মোবাইলে ব্যবহার করে যোগাযোগ দ্রুত এবং নিরাপদ করা যাবে। এতদিন উপগ্রহের সেবা ব্যবহার শুধু মোবাইলে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ভেতরেই সীমাবদ্ধ ছিল। নিজেদের উপগ্রহ হওয়ায় একে এখন দুর্যোগ-মোকাবিলা, যোগাযোগ ও কার্যকর গবেষণা, ইত্যাদি অনেক কাজে ব্যবহার করা যাবে। বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ- ১ এর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে মহাকাশে আমাদের দেশের অগ্রযাত্রা অক্ষুন্ন রেখে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বধীন বর্তমান সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

Popular posts from this blog

প্রথম দেখাতে আমি প্রেমে পরেছি তোমার..

পাত্রী যখন ছাত্রী.....অসাধারণ একটা ভালোবাসার গল্প আশা করি ভালো লাগবে...

এই পৃথিবীতে নিঃশ্বাস নিতে যে বড্ড কষ্ট হচ্ছে।

পাশের বাসায় আসা নতুন ভাড়াটিয়ার সুন্দরী মেয়েটিকে হঠাৎ আমার নজরে পড়লো ।

Keno Ei Nishongota PARTHO - Lyrics IN BANGLA