তুমি এসেছিলে......

https://www.wikihow.com/images/thumb/3/34/Plan-a-Romantic-Evening-on-a-Budget-Step-1-Version-2.jpg/aid647143-v4-728px-Plan-a-Romantic-Evening-on-a-Budget-Step-1-Version-2.jpg
parthoroydiptho.blogspot.com 

.
--আঙ্কেল, অনুগ্রহ করে আপনার হাতটা সরিয়ে , ঠিক হয়ে বসুন।
অর্ধশত বয়সের লোকটাকে তখন থেকে ঠিক করে বসার জন্য অনুরোধ করছিলাম।কিন্তু পাঁচ মিনিট পর উনি আবার আগের রুপে ফিরে আসে।
ভাবতে অবাক লাগে , এরকম আচরণ কোনো এক বাবার বয়সী লোক আমাদের মত মেয়েদের সাথে করে।বলতে খারাপ লাগে,বিবেকে বাধে,বর্তমানে তরুন যুবকদের থেকেও বেশি ভয়ংকর হলো এই বাবার বয়সী কাপুরুষগুলো।
সিএনজির মাঝের সিটে বসেছিলাম।আমার বাম পাশে মামাতো বোন বসে, আর ডান পাশে অর্ধশত বয়সের আঙ্কেলটা বসে।উনাকে আঙ্কেল বলতেও লজ্জা হয়।
ছিঃ !
বারবার উনার হাতের কনুইটা কোমরে এসে লাগতে থাকে।নিষেধ করার পরেও যখন উনি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলেন না তখন বাধ্য হয়ে ড্রাইভারকে বললাম
উনাকে নামিয়ে দেওয়ার জন্য।
আর ঠিক তখনি সামনের সিটে বসা একটা ছেলে গাড়ি থামিয়ে লোকটাকে বললো,
--আঙ্কেল , বাবার গুরত্ব বোঝেন ?প্রকৃত বাবা হলেন তিনি, যার কাছে সন্তান নিরাপদ।আর সেই সন্তান যে শুধু আপনার হবে তা নয়।জানেন তো আঙ্কেল, পৃথিবীর সকল সন্তানের চোখে একজন বাবা কিন্তু বাবা'ই হয়।আর সেটা নিজের বাবা না হলেও আমরা সন্তানরা রাস্তায় বাবার বয়সী কাউকে দেখলে সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করি।
তাহলে আপনারা কেন রাস্তায় নিজের মেয়ের বয়সী কোনো মেয়েকে,নিজের মেয়ে হিসেবে ভাবতে পারেন না ?
এই একটি প্রশ্ন লোকটার চেহারার রঙ বদলে দিলো।লোকটা জানিনা কেন নিজেই ইচ্ছে করে গাড়ি থেকে নেমে গেলো !
হয়তো নিজের ভুলের জন্যই অনুতপ্ত হয়েছিলো।
সেদিন সামনের সিটে বসা ছেলেটার আচরণ আমায় মুগ্ধ করে দিলো।সিএনজি থেকে নেমে যাওয়ার সময়,
ভীষণ কৃতজ্ঞতা থেকেই উনাকে বললাম,
--এই যে শুনুন...।
--জ্বী, বলুন।
সামনে তাকানো অবস্থায় ছেলেটা উত্তর দিলো।
--আসলে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সাইড ব্যাগ থেকে গাড়ি ভাড়া বের করতে করতেই বললাম।
--স্বাগতম ।
মৃদু হেসে ছেলেটা উত্তর দিলো।
গাড়ি ভাড়া দিয়ে, সাইড ব্যাগের ফিতাটা ডান কাঁধে এলিয়ে দিয়ে বাড়িতে ঢুকে গেলাম।
সিঁড়িপথ পার করতে করতে ভাবছি, পৃথিবীতে এখনও কিছু ভালো মানুষ রয়েছে।নতুবা পৃথিবী আরো আগেই ধ্বংস হয়ে যেতো।
সেদিনের ভাবনাটা আজও আমাকে ভাবায় । সেই প্রতিবাদী কন্ঠস্বর,মৃদু হাসি, এক ঝলক তাকানো। আরেকবার ছেলেটাকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিলো।
অনেকটা সময় কেটে গেলো । আমার স্কুল লাইফ শেষের দিকে।আর এই ঘটনাটি ঘটেছিলো স্কুল লাইফের প্রথম দিকে।
সেদিন আমার ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে এক মুহূর্তের জন্য থমকে যাই।শুনেছি মানুষ মন থেকে যা চায় অর্থাৎ মানুষের পবিত্র বাসনা গুলো সৃষ্টিকর্তা পূরণ করে।
যথারীতি সেদিন অহনা'কে পড়াতে গিয়েছিলাম। কলিং বেল চাপতেই একটা পরিচিত মুখ দরজাটা খুলে দিলো।মুখটাই কেবল পরিচিত, কিন্তু উনার ব্যাপারে আমি তেমন কিছুই জানিনা।হ্যাঁ, উনি হলেন সেই ছেলেটি যার সাথে আমার সিএনজিতেই প্রথম দেখা হয়।
--আপনি এখানে ?
ছেলেটার মুখ থেকে এমন প্রশ্ন শুনে অনেকটাই অবাক হই।কারণ এতগুলো দিন অতিবাহিত হয়ে গেলো,এতদিনে তো ছেলেটার আমার কথা মনে থাকাটা অস্বাভাবিক।তারপরেও ভদ্রতার সহিত উত্তর দিলাম,
--জ্বী, আমি পৃথা । অহনার টিচার ।
--ও আচ্ছা, আমি পার্থ ।আসুন ভেতরে আসুন।
আমাকে ভেতরে আসতে বলে পার্থ অন্য রুমে চলে গেলো।
তারপর অহনাকে কিছুক্ষণ পড়িয়ে আমিও ওদের বাসা থেকে বেরিয়ে যাই।
এভাবেই কিছুদিন চলে গেলো।পার্থ-র সাথে আমার আর তেমন কথা হয়নি।আমি প্রতিদিন অহনাকে পড়াতে যেতাম ঠিকই কিন্তু পার্থ দেখেও এড়িয়ে যেতো।আমি বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবেই নিতাম।কারণ, আমার সাথে প্রয়োজন ছাড়া পার্থ কি বা কথা বলবে ?
আজ একটু তাড়াহুড়ো করেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছি।কারণ অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।অহনাকে পড়াতে পড়াতেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে নিশ্চিত।তাই তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গিয়েছি।আর তাতেই ভুল করে ফোন নিয়ে আসা হয় নি।
যথারীতি অহনাদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল চাপতেই পার্থ এসে দরজা খুলে দিলো।
দরজা খুলেই পার্থ ভিতরের রুমে চলে গেলো।
আর এদিকে আমি একা বসে আছি।অহনা পড়ার টেবিলে আসার খবর ই নেই।প্রায় আধঘন্টা ধরে বসেই আছি।কিন্তু ঘরে কারো সাড়া শব্দ পাচ্ছি না।বাধ্য হয়ে অহনার নাম ধরে ডাকতে লাগলাম।আর ঠিক তখনি আচমকা পার্থ আমার সামনে এসে বললো,
--আপনি এখনো যান নি ?সন্ধ্যা হয়ে গেছে তো !
--আসলে আহান বাসায় নেই ?
--ওহ্ নো , অহনা তো বেড়াতে গিয়েছে।আজ তো ওরা ফিরবে না ।আপনাকে ফোন করেনি ?
আমিও ভুলে গিয়েছিলাম আপনি আসার পর বলতে।আসলে চোখে খুব ঘুম ছিলোতো তাই।
--না, ঠিক আছে। আসলে আমি ভুলে,ফোনটা বাসায় রেখে চলে এসেছি।ইয়ে মানে... ঘরে কেউ নেই ?
--আছে তো , এই যে আমি।
--আচ্ছা আমি তাহলে যাই।
--এই যে দাঁড়ান...
--জ্বী ।
কিছুটা ভীত হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম।কারণ আমি খুব বিব্রত হচ্ছি।
--একা যেতে পারবেন ?
--জ্বী ।
অতঃপর চলে আসলাম পার্থর সামনে থেকে।
এভাবে প্রায় কিছুদিন কেটে গেলো।
সেদিন চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বারান্দায় দাঁড়াতেই কেউ একজন কলিং বেল চাপলো।
অর্ধেক শেষ হওয়া চা, মানে হাতে করে চায়ের কাপটা নিয়ে এসেই দরজা খুলে দিলাম অনেকটা অবাক হলাম।দরজার সামনে কেউই ছিলো না।দরজা বন্ধ করতে গিয়ে হঠাৎ মেঝেতে দৃষ্টি গেলো।আর সেখানে রাখা ছিলো একটা পার্সেল।
পার্সেলটা হাতে নিয়ে দরজা বন্ধ করে ভিতরে আসলাম।পার্সেলের উপরে ছোট্ট একটা কাগজের টুকরো ছিলো।যেখানে লিখা ছিলো,
পৃথা...
যদিও পার্সেলটা কে পাঠিয়েছে আমি জানিনা। তার উপর সেই ব্যক্তি আমার নামটাও জানে !
অনেকটা কৌতুহল নিয়ে পার্সেলটা খুলতেই আমি হতবাক হয়ে গেলাম।
একটা নীল শিফন শাড়ি,একজোড়া নীল কানের দুল,দু'মুঠো নীল কাঁচের চুড়ি,একটা নীল টিপের পাতা, আর ছোট্ট একটি চিরকুট রাখা ছিলো পার্সেলটাতে।
চিরকুট খুলতেই দু'টি লাইন দেখতে পেলাম,
অনেক ভেবে,
শাড়ির সাথে জিনিসগুলোর মিলকরণ ,
আসছে ফাগুনে রইলো নিমন্ত্রণ ।
কিছুই বুঝলাম না। কিন্তু মিলকরণটা অসম্ভব সুন্দর হয়েছে।সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।সাথে দু'টি লাইনও অসম্ভব সুন্দর হয়েছে ।
কিন্তু কে এই অপরিচিত ব্যক্তি ? আমায় নিমন্ত্রণ জানালো !
সারাদিন ভাবলাম, কে হতে পারে?কিন্তু উত্তর মিলাতে পারলাম না।
দেখতে দেখতে আরও এক সপ্তাহ চলে গেলো।আজ পহেলা ফাল্গুন।সকালে কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভাঙল।দরজা খুলতেই আরেকটা পার্সেল পেলাম সেই একই নিয়মে।
আজ পার্সেলটার ভিতরে একটা বেলীফুলের মালা আর একটা ঠিকানা লিখা ছিলো।সেই একই হাতের লিখা ! তার মানে আগের পার্সেলটা একই ব্যক্তি পাঠিয়েছেন !
যথারীতি শাড়ি,চুড়ি,কানের দুল আর একটা নীল টিপ পরেই বেরিয়েছি।অবশ্য খোঁপায় বেলীফুলের মালাটা ছিলো।
আমায় দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী গিয়ে দেখি  পার্কের এক নতুন রুপ ! চারপাশে ফাগুনের রং লেগেছে।
হঠাৎ পেছন থেকে একটা গলার আওয়াজ পেলাম,
--এই যে, পৃথা । শাড়ির আঁচলটা ছেড়ে দিয়ে একটা সেফটিপিন লাগিয়ে দিন।দেখতে বেশ লাগবে !
পেছনে তাকাতেই পার্থকে দেখলাম। হ্যাঁ সেই পার্থ ,যার সাথে সিএনজিতে প্রথম দেখা হয়েছে।অনেকটা অবাক হয়ে বললাম,
--আপনি ?
--অবাক হলেন ? কাজল লাগানো চোখ, বড় করবেন না প্লিজ ! ভয় করে ! আপনি অবাক হয়েছেন আমি জানি ।
--তার মানে পার্সেলগুলো আপনি পাঠিয়েছেন ?
শাড়ির আঁচল ছেড়ে দিয়ে একটা সেফটিপিন লাগাতে লাগাতেই বললাম।
--জ্বী । এলোচুলে মেয়েদের খুব সুন্দর লাগে । আর সেই এলোচুলে যদি একটা বেলীফুলের মালা স্থান পায়, তাহলে তো চুলের ঘ্রাণ আর ফুলের ঘ্রাণ দুটো একসাথে মিলে এক অসাধারাণ প্রকৃতির সৃষ্টি হবে ।
অবাক হয়ে পার্থকে দেখছি ! মানুষ এতটা সুন্দর করে কিভাবে কথা বলতে পারে ?
--এই যে মিস্ , ভাবনার রেশ কাটিয়ে চলুন বাস্তবতায় পা রাখি ।
বেলীফুলের মালাটা আমার এলোচুলে লাগিয়ে দিয়ে পার্থ বললো।
--চলুন ।
--আজ যদি বলি ভালোবাসি, তাহলে কি সেটা গ্রহণযোগ্য হবে ? ভীত চোখে মাটির সাথে সন্ধি করতে করতেই বললো।
--যদি সবসময় আমার মিলকরণের দায়িত্বটা কেউ নিতে চায় তাহলে তার সাথে তাল মিলিয়ে বাকিটা পথ হাঁটতে আমি রাজি।মিলকরণে আমি খুবই দুর্বল।
মিলকরণটা শুধু শাড়ি,চুড়িতে সীমাবদ্ধ থাকলে হবেনা।জীবনের সর্বক্ষেত্রে থাকা চাই।
মৃদু হেসে উত্তর দিলাম।
--মিলকরণ ! সমস্যা হবেনা ......
পার্থ আছে তো ! সুতরাং যাওয়া যাক একই পথে।
অতঃপর পার্থর সাথে তাল মিলিয়ে চলার প্রতিজ্ঞায় সামনে অগ্রসর হলাম.....+

Popular posts from this blog

প্রথম দেখাতে আমি প্রেমে পরেছি তোমার..

পাত্রী যখন ছাত্রী.....অসাধারণ একটা ভালোবাসার গল্প আশা করি ভালো লাগবে...

এই পৃথিবীতে নিঃশ্বাস নিতে যে বড্ড কষ্ট হচ্ছে।

পাশের বাসায় আসা নতুন ভাড়াটিয়ার সুন্দরী মেয়েটিকে হঠাৎ আমার নজরে পড়লো ।

Keno Ei Nishongota PARTHO - Lyrics IN BANGLA